





মিশ্র ফল আবাদ করে সফল তরুণ রবিউল ইসলাম (৩৬)। এখন তিনি বাগান থেকে বছরে একেক জাতের ফলই বিক্রি করেন লাখ লাখ টাকার। শুরুটা তরমুজ দিয়ে। এরপর





একে একে কমলা, কুল, আম, জামরুল, কদবেল, লেবু, লিচুসহ ৪৬ জাতের ফল লাগিয়েছেন নিজের বাগানে। সব ফল আবাদেই পেয়েছেন সাফল্য। রবিউল জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ভারাহুত গ্রামের আব্দুল আলিম ও





শাহানাজ দম্পতির বড় ছেলে। ভারাহুত গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মাঠে ফসলি জমি থেকে উঁচু জমিতে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন রবিউল। সেই বাগানে পোকামাকড় দমন করতে কীটনাশকের বদলে





তিনি ব্যবহার করেন ফেরোমন ফাঁদ ও কালার টেপ। তাতে তার উৎপাদিত ফলগুলোও হয়ে থাকে বি’ষমুক্ত। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রবিউল তিন বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, কাশ্মীরি আপেল কুল, সিডলেস, টক-মিষ্টি ও





বাউকুলের বাগান। আরও তিন বিঘা জমিতে দার্জিলিং কমলা, চায়না কমলা, বারি-১ জাতের মাল্টা, কাটিমন আম, বানানা ম্যাঙ্গো, বারি-৪ আম, গৌড়মতি আম, ব্ল্যাক ম্যাঙ্গো,





আম্রপালি, সূর্য ডিম, থাই সফেদা, থাই শরিফা, মিষ্টি জলপাই, মিষ্টি তেঁতুল, রাম বুটান, লিচু, জামরুল, কদবেল, জাম, সিডলেস লেবুসহ ৪৬ জাতের ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। বাগানে গিয়ে দেখা গেল নানা জাতের সব ফল ধরে রয়েছে। ফল চাষী রবিউল ইসলাম জানান,
ভালোবেসে ২০০৯ সালে ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন জয়পুরহাট পৌর শহরের সবুজনগর এলাকার মাসুদ রানার মেয়ে মাছুরাকে। কিন্তু দুই পরিবারের কেউই তাদের মেনে নেয়নি। জীবিকার তাগিদে রবিউল ঈশ্বরদীর একটি দোকানে কাজ করেছেন। পরে তার দাদা গ্রামে একটি মুদি দোকান করে দেন।
সে দোকানটি দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে গেলে অথৈ জলে পড়েন রবিউল। নানা ধরনের কাজ করেছেন। কিন্তু সাফল্য মিল ছিল না। ১৪ শতক জমিতে আবাদের জন্য বিনা মূল্যে বারোমাসি তরমুজ বীজ, মাল চিং পেপার ও কারিগরি সহায়তা দেয় সংগঠনটি। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি রবিউলকে। ২০১৯ সালে এহেড সোশ্যাল অর্গানাইজেশন (এসো) থেকে তাকে তরমুজ চাষে সহায়তা দেয়া হয়।
রবিউল আরও জানালেন, ৯ মাসে তিনবারে তিনি সাড়ে ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেন। এরপর ২০২০ সালে দুই বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন। সেবার সব খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হয় আট লাখ টাকা। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল পরের দুবছরেও। এর মধ্যেই ২০২১ সালে প্রথমে তিন বিঘা জমিতে বরইয়ের বাগান করেন। এর ছয় মাস পরে আরও তিন বিঘা জমিতে লাগান বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ।
রবিউল বলেন, ২০২২ সালে বাগান থেকে ৩ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছিলাম। এ বছর এরই মধ্যে দুই লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছি। বিভিন্ন জাতের আরও পাঁচ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। তাছাড়া কাটামন জাতের আম ও পেয়ারা বিক্রি করেছি এক লাখ টাকার।
এদিকে, রবিউল ইসলামের ফলের বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এক বিঘা জমিতে বরইয়ের বাগান ও আরও ১৫ কাঠা জমিতে বরই ও পেয়ারার বাগান করেছেন স্থানীয় মিলন সরকার। তিনি বলেন, এ বছর বাগান থেকে ২৫ হাজার টাকার বরই বিক্রি করেছি। আরও লাখ টাকার বরই ও পেয়ারা বিক্রি করা সম্ভব হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, রবিউল ইসলাম একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা। তিনি বারোমাসি তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সার্বক্ষণিক সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছি। এছাড়া বরই ও অন্যান্য ফলের বাগান গড়ে তুলে সেখানেও সফল হয়েছেন।
Leave a Reply