





বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমানকে কাঁধে তুলে যখন সতীর্থরা নাচানাচি করছিলেন, কাচঘেরা ভিআইপি গ্যালারিতে বসে দৃশ্যটা উপভোগ করছিলেন হাফসা মাজহার। একটু পর





বেবি সিটারে শোয়ানো মেয়ে আভা-নূর রহমানকে নিয়ে বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে নেমে এলেন হাফসা। বঙ্গবন্ধু ৪৬তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে চ্যাম্পিয়ন সেনাবাহিনীর অ্যাথলেটদের





বিজয় উদ্যাপন মুঠোফোনে ভিডিও করতে শুরু করলেন তিনি। হাফসার বাড়ি পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির গুজার খান গ্রামে। পাকিস্তানি হয়েও হাফসার হৃদয়ে এখন শুধুই বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দ্রুততম মানব ইমরানুর যে





হাফসার স্বামী। ইমারানুরের শ্বশুর মাজির ইকবাল হোসেন ব্রিটিশ নাগরিক। তবে তাঁর শাশুড়ি গুলশান বেগমের জন্ম পাকিস্তানে। ১৯৯২ সালে হাফসার বাবা মাজির ইকবালের সঙ্গে





বিয়ে হয় গুলশান বেগমের। এরপর তিনি পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। সেখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা হাফসার। পড়াশোনাও করেছেন ইংল্যান্ডেই। তবে নাড়ির টানে প্রায়ই পাকিস্তানে যান হাফসা। বর্তমানে





ইংল্যান্ডের একটি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে ইমরানুরের সঙ্গে পরিচয় হাফসার। এরপর ২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছে তাঁদের। দুই বছর আগে
হাফসার কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে কন্যা আভা। মেয়েকে এবার পিতৃভূমি চেনাতে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। প্রথমবার বাংলাদেশে এসে ভীষণ উচ্ছ্বসিত হাফসা, ‘এখানে আসার কথা শুনে শুরুতে একটু ভয় লাগছিল। কিন্তু
এই কদিনে বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আর আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। সেনাবাহিনীর খেলোয়াড়, কর্মকর্তারা সবাই খুব আন্তরিক। আমি রোমাঞ্চিত। এই অভিজ্ঞতাটা অসাধারণ।’
এবারের জাতীয় অ্যাথলেটিকসে পুরুষ বিভাগে সেরা অ্যাথলেটের পুরস্কার জিতেছেন ইমরানুর। ১০০ মিটার স্প্রিন্টের পর ক্যারিয়ারে প্রথমবার ২০০ মিটারেও জিতেছেন সোনা। ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতে সেনাবাহিনীর হয়ে রুপা জিতেছেন।
ইমরানুরের এমন অর্জনে খুবই খুশি হাফসা, ‘আমার স্বামী যখন দ্রুততম মানব হন, সেই মুহূর্তটা গর্বের। আমার পরিবারের সবাই ওর অর্জনে খুব খুশি। এটা বাংলাদেশের জন্যও একটা বিশাল অর্জন।
নিজেকে বাংলাদেশি বলেই মনে করেন হাফসা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গেমসে যখন ইমরানুর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন, জার্সিতে থাকে বাংলাদেশের পতাকা, সেই আবেগ ছুঁয়ে যায় হাফসার, ‘আমি নিজেকে বাংলাদেশের একজন বলেই মনে করি। যখন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে, খুব গর্ব হয় আমার। ওর সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পেরে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়।’
গত জুলাইয়ে বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে ইমরানুর অংশ নেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে। স্টেডিয়ামে বসেই ইমরানুরের দৌড় দেখেছিলেন হাফসা। তাঁর কথা,‘বার্মিংহাম আমার শহর। পরিবারের সদস্যসহ আমরা অনেকে ওর দৌড় দেখতে গিয়েছিলাম। সে যখন বাংলাদেশের হয়ে দৌড়াচ্ছিল, এর আগে ধারাভাষ্যকার তাকে পরিচয় করে দিচ্ছিলেন। ওই মুহূর্তে বাংলাদেশের নাম বলতেই সবাই চিৎকার করে উঠি। আমার জন্য মুহূর্তটা খুব স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শেফিল্ডে একটি ব্যাংকে চাকরি করেন ইমরানুর। চাকরির পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলন করছেন পারফরম্যান্স ধরে রাখতে। ইমরানুরের অ্যাথলেটিকসের প্রতি নিবেদনের পেছনে বড় অবদান হাফসার। তিনি বলেন, ‘ও অনুশীলনের জন্য প্রচুর সময় দেয়। অন্য সবকিছুর চেয়ে আমি সব সময় ওর খেলাধুলার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। যাতে অ্যাথলেটিকসে সে পুরো মনোযোগ দিতে পারে, যাতে কোনো রকম সমস্যা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখি।’
২০০৬ কলম্বো এসএ গেমসে মাহফুজুর রহমান ১১০ মিটার হার্ডলসে সোনা জিতেছিলেন। গত ১৬ বছরে অ্যাথলেটিকসে আর কেউ সোনার পদক উপহার দিতে পারেনি বাংলাদেশকে। কিন্তু ইমরানুরকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখেন হাফসা। একদিন ইমরানুরের সুবাদে এসএ গেমসে অ্যাথলেটিকসে উড়বে বাংলাদেশের পতাকা, হাফসা এখন সেই দিনেরই অপেক্ষায়।
Leave a Reply