ডাহুক পাখির জীবন কাহিনী একটা পাখির স্বভাব এমনটা হতে পারে যা দেখে অনেক নেটিজনরা হতবাগ হয়ে গেছেন তুমুল ভাইরাল ভিডিও!

গ্রামবাংলায় রাতের বেলায় ঝোপের ভেতর থেকে ‘কোয়াক কোয়াক’ ডাক শুনেই চিনতে পারা যায় ডাহুক পাখিকে। জলাভূমির আশপাশের

ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। ডাহুক আসলে চিরবিরহী পাখি। ডাহুক আসলে চিরবিরহী পাখি। বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো ডাহুক-ডাহুকিকে নিয়ে

ভালোবাসার গল্প প্রচলিত আছে গ্রামে। যখন ডাহুক তার সঙ্গীর খোঁজ না পায়, দিনরাত ডাকতে ডাকতে গলায় রক্ত উঠে একসময়

মারা যায়! ডাহুক হারিয়ে গেলে ডাহুকি দিনরাত পাগলের মতো ডাকাডাকি করতে থাকে, যা বর্ষাকালে বেশি শোনা যায়। কেউ কেউ বলে, ডাকতে

ডাকতে ওদের গলা থেকে রক্তের ফোঁটা ওদের ডিমের ওপর পড়লেই তবে ডিম ফোটে। আবার কেউ বলে, মানুষকে ওরা ডাকাডাকি করে

বিপদ সংকেত জানায়। আসলে এসবের কিছুই নয়, ওদের প্রজনন সময় ঘনিয়ে এলে সঙ্গী পাখিকে আকৃষ্ট করতে এমন আর্তনাদ করে ডাকতে থাকে। এদেরকে ‘ডাইক’, ‘পান পায়রা’, ‘ধলাবুক ডাহুক’ বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এরা পোষ মানে। গ্রামের শিকারিরা পোষা ডাহুক পাখি দিয়ে এ প্রজাতির বুনোপাখি শিকার করে।

মাঝারি আকৃতির এই পাখিটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর। লম্বায় ৩২-৩৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে অনেকটা একই রকম। ডাহুকের লেজ ছোট, লেজের নিচের অংশ লালচে আভা সমৃদ্ধ। লেজটা অধিকাংশ সময় খাড়া থাকে। হাঁটার সময় লেজটাকে নাচিয়ে হাঁটে। পা লম্বা, পায়ের নখগুলো লম্বা লম্বা—ফলে পদ্ম ও শাপলা পাতায় দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে এবং

কচুরিপানার ওপর ছোটাছুটি করে। পিঠের রং ধূসর থেকে খয়েরি-কালো। মাথা, মুখমণ্ডল, গলা, বুক ও পেট সম্পূর্ণ সাদা। ঠোঁট হলুদ রঙের, ঠোঁটের ওপরে লাল রঙের ছোট্ট দাগ আছে। তবে ডাহুকের বাচ্চারা সবসময় কালো রঙের হয়। ডাহুক পাখির প্রধান খাবার জলজ পোকামাকড়, ছোট মাছ, জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা, শ্যাওলা, ধান ইত্যাদি। পোষা ডাহুক চাল, ভাত খায়।

অনেক সময় খাবারের খোঁজে মানুষের কাছাকাছি চলে আসে। বাসা বাঁধে জলার ধারে ঝোপে কিংবা বাঁশঝাড়ে, তবে পানি এদের প্রধান আশ্রয়। ডাহুক খুব সতর্ক পাখি, আত্মগোপনে পারদর্শী। পুকুর, খাল, জলাভূমি, বিল, নদীর গোপন লুকানো জায়গা এদের খুব প্রিয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এদের প্রজননকাল। ৬-৭টি ডিম পাড়ে। ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা।

ডাহুক-ডাহুকি উভয়েই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮ থেকে ২০ দিন। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ডাহুক দেখা যায়। নির্দয় শিকারিদের অত্যাচার আর বসবাসের জায়গার অভাবে প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। আইইউসিএন ডাহুককে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই পাখি সংরক্ষিত।

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন>>>

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*