




আমার দাদুর তখন সাতাশ আঠাশ বয়স , বিয়ে করেন নাই তখনো , বংশের চাকুরি না করার রেওয়াজ ভেঙ্গে





তিনি সবে বৃটিশ সরকারের অধীনে খাদ্য বিভাগে চাকরি শুরু করেছেন । দাদুর তখন পোস্টিং ভারতের কোনো এক পাহাড়ী এলাকায়,





জায়গাটার নাম এই মূর্হতে মনে পরছে না , তিনি সেখানে একা একা থাকেন একা একা পাহাড় জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান আর সময় সুযোগ পেলে





বন্দুক হাতে শিকার করতে বেড়িয়ে পড়েন। তো একদিন দাদু বন্দুক নিয়ে শিকারে গেছেন জঙ্গলের একটু ভিতরের দিকে,





ছোট খাটো কিছু প্রানী পেলে শিকার করার জন্য । হঠ্যাৎ তার চোখ যায় একটি ঝোপের দিকে, ঝোপের আড়ালে খুব অসুস্থ অবস্থায়





একটা চিতা বাঘের বাচ্চা শুয়ে আছে , অনেক সময় ধরে অনাহারে থাকার কারনে শরীর দূর্বল হয়ে পরেছে বাঘটার । দাদু তাৎক্ষনিক বাঘের বাচ্চাটিকে নিজের বাসায় নিয়ে আসেন । খাবার ও ওষুধ পেয়ে চিতা বাঘের বাচ্চাটি অল্প কয়েক দিনে সুস্থ হয়ে ওঠে, দাদু ঠিক করেন তিনি এই বাঘের বাচ্চাটি নিজের কাছে রেখে পালবেন এবং বাঘের বাচ্চাটির একটি নামও দিলেন “বাহাদুর”।
তো দাদুর কাছে থেকেই বড় হতে থাকলো বাহাদুর, দাদু তাকে খাওয়ানোর জন্য রোজ টাটকা গরুর অথবা খাসির মাংস কিনে নিয়ে আসতেন , সেগুলো নিজের হাতে কেটে ধুয়ে গরম পানিতে সিদ্ধ করে খাওয়াতেন বাহাদুর কে । বাহাদুর চিতা বাঘের বাচ্চা হলেও ছোট থেকে মানুষের সাথে বসবাস করার কারনে তার মধ্যে হিংস্রতা ছিলো না,
আর দাদু তাকে নিজ হাতে তৈরি খাবার দেওয়ার জন্য সে কোনোদিন আর দশটা বাঘের মতো শিকারটাও শেখেনি । বাহাদুর কখনো বন্দি অবস্থায় থাকতো না , সে সর্বদা আমার দাদুর ঘরের সামনের বারান্দাতে ছাড়া অবস্থায় থাকতো, একদম গৃহপালিত পশুর মতো । সব কিছু ভালোই যাচ্ছিলো কিন্তু বাহাদুর কে নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে একধরনের আতংক বিরাজ করতে শুরু করলো ,
গ্রামের মানুষ লোকালয়ের মাঝে একটা হিংস্র জংলি প্রানী কে কিছুতেই রাখতে চাইলো না। তাদের ধারনা এই জন্তু যে কোনো সময় তাদের ও তাদের গবাদিপশুর প্রান নাশ করতে পারে, কিন্তু বাহাদুর জাতিতে হিংস্র হলেও সে স্বভাবে হিংস্র ছিলো না । দাদু কিছুতেই তাদের বোঝাতে পারে না যে বাহাদুর তাদের কোনো ক্ষতি করবে না , উল্টো দাদুকে সবাই চাপ দিতে থাকে তিনি যেনো বাঘটিকে বনে ছেরে দিয়ে আসেন,
কিন্তু দাদু তার সন্তান তুল্য সেই বাহাদুরকে নিজের থেকে কিছুতেই দূরে সরায়ে রাখবেন না । এমন সময় তার কাছে আসেন এলাকার কিছু মুরব্বি, তারা দাদুকে অনেকভাবে বোঝান, তারপর দাদুও চিন্তা করেন বাহাদুরকে তার আসল আবাসস্থলে রেখে আসায় উত্তম, এখানে স্থানীয় লোকেরা কোনোসময় যদি আতংকিত হয়ে বাহাদুরকে মেরে ফেলে তাহলে তিনি সেটা সহ্য করতে পারবেন না, এর চেয়ে জঙ্গলেই বাহাদুর নিরাপদ থাকবে।
এক রাতে তিনি তার অতি আদরের বাহাদুরকে জঙ্গলে রেখে আসেন। তাকে ছারা নিরিহ বাহাদুর যে ঠিক মতো নিজের খাবারের যোগারটাও করতে পারে না সে কিভাবে জঙ্গলে টিকে থাকবে এই চিন্তায় বার বার দাদুর মাথায় ঘুরতে থাকে । এই ঘটনার প্রায় দুই বছর পর দাদু পাশের এলাকাতে বদলি হয়ে যান এবং এখানে তার যে থাকার জায়গা সেটা একদম জঙ্গল ঘেষে, রাতে বারান্দায় বসলে প্রায় অনেক জন্তু জানোয়রকে চলাফেরা করতে দেখা যায়, একদিন রাতে দাদু দেখেন কিছু চিতা বাঘ ওদিক দিয়ে হেটে সামনের নদীতে পানি খেতে যাচ্ছে,
তো হঠ্যাৎ কি মনে করে বাহাদুর বলে ডাক দিতেই একটা বাঘ ঘাড় ঘুরায়ে ডাকের উৎস খুজতে শুরু করলো, অনেক্ষন ধরে ওখানে বাঘটা অপেক্ষা করলো ও দাদুও তার বাহাদুর কে চোখ ভরে দেখলো । ঐদিন দাদুর বুকে বাহাদুরকে নিয়ে জমে থাকা সেই কষ্টটা অনেক কম হয়ে গিয়েছিলো , কারন তার বাহাদুর জঙ্গলের কঠিন পরিস্থির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে পেরেছে এবং সে তখনও দাদুর দেওয়া “বাহাদুর” নামটি ভোলেনি ।
Leave a Reply