মাত্র ১ হাজার টাকায় শুরু করে এখন ৪ লাখ টাকার মুরগী খামারে!

‘বগুড়া শহরের সেউজগাড়ীর একটি ছাত্রাবাসে থেকে আমি পড়ালেখা করতাম। করোনার সময় বাড়ি চলে এলাম। ঘরবন্দী সময়ে একদিন ফেসবুকে

স্ক্রল করতে করতে কিছু শৌখিন মুরগি চোখে পড়ল। বেশ ভালো লাগল। সিল্কি জাতের দুটি মুরগি কিনব ভাবছিলাম। কিন্তু

কোথায় পাই? খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেল বগুড়াভিত্তিক একটি ফেসবুক গ্রুপে—বগুড়া বিজনেস কেয়ার। খুব বেশি টাকা তো ছিল না। মায়ের দেওয়া এক হাজার টাকায় দুটি দেড় মাস বয়সী মুরগির বাচ্চা কিনি। যত্ন নিতে থাকি। বাচ্চা দুটি বড় হয়ে

ছয় মাসের মাথায় ডিম দেওয়া শুরু করে। ডিম থেকে আবার বাচ্চা হয়। এভাবেই শুরু।’ বলছিলেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাজ্জাদুল আলম। করোনাকালে মুরগি পালন শুরু করেছিলেন। এখন

তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি পুরোদস্তুর খামারি। এলাকায় ‘শখের মুরগিওয়ালা’ হিসেবে বেশ পরিচিতি তাঁর। কারণ, এটিই তাঁর ফেসবুক পেজের নাম। গাবতলী শহরের কলেজপাড়ায় গিয়ে ‘মুরগিওয়ালার’ খোঁজ করলে সবাই

সাজ্জাদুলের বাড়ি দেখিয়ে দেয়। এতে তিনি মন খারাপ করেন না। বলেন, ‘শখ থেকে শুরু করেছিলাম। এখন আমি নিজেই আয়রোজগার করে ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া ও

নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারছি। এটাই শান্তি।’ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুরগি ও মুরগির বাচ্চা পৌঁছে দেন সাজ্জাদুল। দূরদূরান্ত থেকে তাঁর কাছে ক্রেতা আসেন মুরগি কিনতে। ভিনদেশি ১৫টি বিরল জাতের মুরগি আছে সাজ্জাদুলের খামারে—

সিল্কি, ব্রাহামা, কোচিন, বেনতাম, ফ্রিজেল, ফনিক্স, ইয়োকোহামা, অনাগাদুরি, ফাইটার, পলিশকেপ, সেব্রাইট, শো-শেরেমা, হোয়াইট ফেস, রোসকম্প ও সুমাত্রা। মুরগিগুলো নিয়মিত ডিম দেয়। সাজ্জাদুল জানান, সব মিলিয়ে এখন তাঁর খামারে প্রায় চার লাখ টাকার মুরগি আছে।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কলেজ রোডে এই তরুণ উদ্যোক্তার বাড়ি। বাড়ির আশপাশে গেলেই কানে আসে মুরগির ডাক। কাঠ ও লোহার নেট দিয়ে তিনতলা তাক তৈরি করেছেন সাজ্জাদুল। এখানেই মুরগিগুলো থাকে। তাকের প্রতিটি ঘরে জাতভেদে আলাদা মুরগি রাখা। সাজ্জাদুল জানান, দুই মাস আগেও মালয়েশিয়ার তিনটি শো-শেরেমা জাতের মুরগি ৩০ হাজার টাকায় কিনেছেন। এগুলো এখন ডিম দিচ্ছে। ডিম থেকে বাচ্চা তুলে বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। প্রতি জোড়া শো-শেরেমা জাতের মুরগির বাচ্চা দুই–তিন হাজার টাকায় বিক্রি করা যেতে পারে।

সাজ্জাদুল বলেন, ‘কেউ যদি শখ থেকে এই মুরগি লালন–পালন করতে চান, তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে, শুরুতেই সব বড় মুরগি কেনার দরকার নেই। দু–একটি দেশি জাতের মুরগি দিয়ে শুরু করতে পারেন। তারপর বিদেশি জাতের এক জোড়া বাচ্চা কিনলেন। আগে মুরগি পালনের কৌশলগুলো শিখতে হবে, অভ্যস্ত হতে হবে।’ সাজ্জাদুলের পরামর্শ আমলে নিতেই হয়।

কারণ, এরই মধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে দুটি পুরস্কার পেয়েছেন এই তরুণ। বগুড়া সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ২০২২-এ অংশ নিয়ে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন। এবার গাবতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে পোলট্রি ক্যাটাগরিতে জিতেছেন দ্বিতীয় পুরস্কার। সাজ্জাদুল ইসলামের বাবা আবদুল কাইয়ূম তরফদার পেশায় ব্যবসায়ী। ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি আয় করছে দেখে তিনি বেশ আনন্দিত। কথা হলো বগুড়ার গাবতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শাহিনুর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের তরুণেরা পশুপালনে আগ্রহী হচ্ছেন, এটা খুবই ইতিবাচক। সরকার প্রাণী কল্যাণ আইন করছে; যেন এই প্রাণীগুলো শুধু বিনোদনের খোরাক না হয়ে ব্যবসায়িকভাবেও লাভজনক হতে পারে। যদি কোনো শিক্ষার্থী এ রকম উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে সরকারের রাজস্বের প্রকল্পের আওতায় এবং রাজস্ব খাত থেকে আমরা তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। সেই সঙ্গে চিকিৎসার বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করি।’ তথ্যসূত্র: প্রথমআলো।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*