





বছরের পর বছর ধরে বন্য হাতির আক্রমণ–আতঙ্কে আছে শেরপুরের গারো পাহাড় সীমান্তের তিন উপজেলার মানুষ। গত ২০ বছরে





হাতির আক্রমণে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। নানা কারণে মারা পড়েছে ৩১টি হাতি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে





হাতির আক্রমণ প্রতিরোধে ও হাতি-মানুষের সহাবস্থানে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন সংগঠন স্থায়ী পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। জেলা প্রশাসন,





বন ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র এবং সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালের ১৮ অক্টোবর





বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ওপার মেঘালয় রাজ্যের ডালু গ্রাম থেকে আসা ২০-২৫টি বন্য হাতির একটি দল প্রথমে নালিতাবাড়ী উপজেলার বনগাঁও,





দাওধারা, কাটাবাড়ী ও হাতিপাগার গ্রামের পাহাড়ে অবস্থান নেয়। ওই দিন হাতির আক্রমণে দুজন নিহত হন। এর পর থেকে দুই দশক ধরে মাঝেমধ্যেই হাতিগুলো সীমান্তবর্তী লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ হত্যা করছে; বাড়িঘর, ফসল ও গাছপালা ধ্বংস করছে। পাশাপাশি মানুষের প্রতিরোধসহ নানা কারণে হাতিও মারা পড়ছে।
এক মাস ধরে বন্য হাতির একটি দল শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে অবস্থান করছে। হাতির আক্রমণ–আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন মানুষ।ময়মনসিংহ বন বিভাগ ও জেলা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ বছর আগে হাতির সংখ্যা ২০-২৫ হলেও প্রজনন বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে হাতির সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০টি।
দুই দশকে বন্য হাতির আক্রমণে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীর পাহাড়ি এলাকায় ৫৮ জন মানুষ নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হয়েছেন। মানুষের প্রতিরোধসহ নানা কারণে ৩১টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৫ জন মানুষ ও ৪টি হাতি মারা যায়।কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাবমতে, হাতির তাণ্ডবে ২০ বছরে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির ফসল ও সবজি বিনষ্ট হয়।
ক্ষতির পরিমাণ ২৫ কোটি টাকা। সাধারণত আমন ও বোরো ধান পাকার সময় হাতির দল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শেরপুরের উপপরিচালক মোহিত কুমার দে।বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মে নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী ফেকামারী পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে অপূর্ব চাম্বু গং (৪৫) নামে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এক ব্যক্তি নিহত হন।
তিনি ১০ বছর আগে বিয়ে করে নালিতাবাড়ীর পানিহাটা গ্রামের গারো পল্লিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন।গত ৯ নভেম্বর শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমুল ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা মালাকোচা গ্রামের পাহাড়ের টিলা থেকে একটি মরা হাতি উদ্ধার করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সীমান্তের ওপার থেকে একদল বন্য হাতি খাবারের সন্ধানে শ্রীবরদী উপজেলার মালাকোচা গ্রামের লোকালয়ে আসে।
এর পর থেকেই প্রায় অর্ধশত হাতি পাহাড়ি এলাকার কৃষকের কাঁচা-পাকা আমন ধান ও শাকসবজির বাগান খেয়ে নষ্ট করে। তাই সন্ধ্যা হলেই কৃষকেরা হাতির আক্রমণ থেকে তাঁদের ফসল রক্ষা করতে বিভিন্ন স্থানে জেনারেটরের মাধ্যমে জিআই তার দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ দেন। গত ৯ নভেম্বর ভোররাতে বিদ্যুতের তারের সঙ্গে জড়িয়ে ওই হাতি মারা যায় বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হন।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
Leave a Reply